তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীর অজান্তেই তার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি বাড়ছে। শাখের করাতের মতো বিষয়টি। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এ খাতে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের দিক থেকে এসব ঝুঁকির পথ তৈরি হওয়ার প্রবণতাই বেশি। তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা কম থাকা, এ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার হালনাগাদ না রাখা, পাইরেটেড সফটওয়্যারের ব্যবহার এ ঝুঁকিগুলোর অন্যতম কারণ। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে বিজিডি ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্স রেসপন্স টিম (সার্ট)। সংস্থাটি ২০১৬ সাল থেকে সাইবার নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার হিসাব রাখছে। এতে দেখা যায় প্রতি বছরই সাইবারে সন্দেহজনক গতিবিধি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। লাইসেন্স ও সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে কম। বিভিন্ন জায়গা থেকে এগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করা হয়। পাইরেটেড সফটওয়্যারের যে সোর্স, তার ভেতরের বড় একটা অংশ হচ্ছে ম্যালওয়্যার। সফটওয়্যার ইনস্টল করার সঙ্গে সঙ্গে ওই ম্যালওয়্যারও ডিভাইসে ঢুকে পড়ে। যে ডিভাইসে ইনস্টল করা হয় সেখানে সবারই একটা ই-মেইল আইডি থাকে। সেখানে স্প্যাম মেইলও আসে। এর কারণে স্প্যামের দিক থেকেও বাংলাদেশ এগিয়ে। করোনাকালে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। অনলাইনে শিক্ষাগ্রহণ, কেনাকাটা, সংযোগ রক্ষা করা এবং অফিসের কাজ- সব মিলিয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। অনেকেরই বাসার কম্পিউটারে বৈধ সফটওয়্যার নেই। অফিসে সাধারণত লাইসেন্সধারী সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাসায় ব্যবহৃত ডিভাইসে অনেক ক্ষেত্রেই পাইরেটেড সফটওয়্যার থাকে। সেখান থেকে অফিসের মেইল বা বিভিন্ন কাজ করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ফলে এর মাধ্যমে ওই অফিসেরও সাইবার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সাইবার হুমকিতে স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক খাতগুলো অন্যতম বড় লক্ষ্য থাকে। এরপর আছে সরকারের সংবেদনশীল অবকাঠামো, স্বাস্থ্য খাত, ই-কমার্সের সাইট, অর্থ লেনদেনের মোবাইল এ্যাপ, জনপ্রিয় সাইট। গ্রাহক পর্যায় থেকে তথ্য বেহাতের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। অসচেতনতা, সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে না জানার কারণে নিজের অজান্তেই গ্রাহকের তথ্য নানা জায়গায় চলে যায়। সাইবার হামলা মোকাবেলা বা সতর্ক থাকার জন্য কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরী। এগুলো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবাগ্রহীতা বা যে কোন ধরনের ব্যবহারকারীর সাইবার সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার-প্রচারণার কর্মসূচী নেয়া, প্রতিষ্ঠানগুলোর সব সেবা ও ওয়েব পোর্টাল এবং এ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সঠিক ধারণা দেয়া। অব্যবহৃত সব ডোমেইন, ইউজার এ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য আইটি এ্যাসেট যথাযথভাবে নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা করা। এগুলো অনুসৃত হলে সাইবার নিরাপত্তারও উন্নতি সাধিত হবে।
Leave a Reply